বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : শুভেন্দু অধিকারীর পথই কি অনুসরণ করছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়? শুভেন্দু অধিকারী প্রথমে পশ্চিমবাংলা সরকারের দেওয়া বিভিন্ন পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার পর মন্ত্রিত্বও ছেড়ে দেন। এর পরই ইস্তফা দেন বিধায়ক পদ থেকে। শেষে ছেড়ে দেন দলের প্রাথমিক সদস্য পদ। ঠিক সেই পথই যেন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন রাজীব। মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন আগেই। শুক্রবার সকালে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন।
২২ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে সবাই যখন নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখনই মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি এবং রাজভবনে গিয়ে নিজের ইস্তফাপত্র দিয়ে এসেছিলেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তখন বাড়িতে ছিলেন না। তবে রাজভবনে তাঁর সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের দেখা হয়। তার পরই সংবাদ মাধ্যমের সামনে দল ও সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ অভিমান ঢেলে দেন। এর পর শুক্রবার দুপুরে তিনি বিধানসভায় গিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সশরীরে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দেন। তবে সূত্রের খবর, তাঁর ইস্তফাপত্র এখনও গৃহীত হয়নি। এর পর বিকেলে তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদও ছেড়ে দেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এবং তৃণমূল ভবনে সেই ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, রবিবার ডুমুরজলার সভায় তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। যদিও এই বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যে এখনও কোনও কথা ঘোষণা করেননি।
এরই মধ্যে এদিন সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার একটি বাড়িতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল এবং রথীন চক্রবর্তী। এক ঘণ্টার বৈঠকে ঠিক হয় রবিবার ডুমুরজলায় অমিত শাহের সভায় তাঁরা–সহ সদ্য তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়াও বিজেপিতে যোগ দেবেন। উল্লেখ্য, তখনও পর্যন্ত অমিত শাহের পশ্চিমবাংলা সফর বাতিল হয়নি। কিন্তু পরে জানা যায়, শনিবার দিল্লিতে ইজরায়েল দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণের জেরে অমিত শাহ রাজ্যে আসছেন না। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে তাঁর দু’দিনের রাজ্য সফরে আসার কথা ছিল। পরিবর্তে রবিবার রাজ্যে আসতে পারেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। তিনি আসতে না পারলে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংও আসতে পারেন রাজ্যে। আবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও আসতে পারেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
তবে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডুমুরজলায় ওই পাঁচজন বিজেপিতে যোগ দেবেন কিনা, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, রবিবার ডুমুরজলায় বিজেপিতে যোগদান কর্মসূচি বহাল রয়েছে। ওইদিন কোন কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন, তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শনিবার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাঁর আশা, আগে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ওইদিন বিজেপিতে যোগদান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আচমকা বঙ্গসফর বাতিল হওয়ায় রাজ্য বিজেপি কিছুটা হলেও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে। দিল্লি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ইজরায়েল দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণের পরই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। তার পর তিনি নিজেই দিল্লিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জানা গিয়েছে, অমিত শাহের পরবর্তী কর্মসূচি কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন করে স্থির হবে।
এদিকে, আচমকাই বিধানসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা বিধায়ক আবদুল মান্নান সম্পর্কে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন আবদুল মান্নান। উল্লেখ্য, বিধানসভায় আবদুল মান্নানের ঘরে ঢুকে তাঁকে প্রণাম করেন শুভেন্দু। তার পর দু’জনের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে আলোচ্য বিষয় নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে দু’জনের কেউই কোনও মন্তব্য করেননি। এমনকী, ছবি তুলতেও তাঁরা কাউকে দেননি। দু’জনেই জানিয়েছেন, এই সাক্ষাৎ ছিল নেহাতই সৌজন্যমূলক। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয় নিয়েই দু’জনের মধ্যে কথা হয়। অবশ্য শুক্রবারই বিজেপিতে যোগ দিলেন জনপ্রিয় টেলিভিশন তারকা অভিনেতা কৌশিক রায়। এদিন দলের সদর দফতরে তাঁর হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
এই মুহূর্তে তাঁর অভিনীত ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকটি সম্প্রচারিত হচ্ছে স্টার জলসায়। ওই ধারাবাহিকে তিনি ‘বাবিন’–এর চরিত্রে অভিনয় করছেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই কৌশিক বলেছেন, ‘আমার রাজনীতিতে আসার আগ্রহ অনেকদিনই ছিল। বিভিন্ন দল থেকে ডাকও পেয়েছি। কিন্তু মনস্থির করে উঠতে পারছিলাম না। মানুষের পাশে থেকে তাঁদের জন্য কাজ করতে চাই বলেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।’ অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনি নোটিস ধরালেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন জনসভায় অভিষেকের বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে তাঁর সম্মানহানি করেছেন। তাই এই আইনি নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।